বিশ্বজুড়ে অর্ধশত কোটি টাকার বাজার গড়েছে বাউফলের মৃৎশিল্প,দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে বাউফলের মৃৎশিল্প। এক সময় পয়সার হিসাবে বেচাকেনা হওয়া এ মৃৎশিল্পের বাজার এখন অর্ধশত কোটি টাকায় ঠেকেছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে দেশের নামি-দামি শোরুম ও শপিংমলে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার অর্ধশত দেশেও রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য।এক সময় তিনবেলা খাবার জোটাতে যাদের রাতদিন এক করতে হতো সেই পাল পরিবারের সদস্যরা এখন সমৃদ্ধি আর শান-শওকতে বসবাস করছেন। মৃৎশিল্প পাল সম্প্রদায়ের আদি পেশা হলেও এ পেশায় এখন মুসলিম পরিবারের সদস্যরাও মনোনিবেশ করছেন। তারাও পালদের সঙ্গে সমান তালে নতুন কারখানা খুলছেন।
বিশ্বজুড়ে অর্ধশত কোটি টাকার বাজার গড়েছে বাউফলের মৃৎশিল্প
আদিকালে তামাক পাতা মাখার জন্য ছোট ছোট পাত্র তৈরি করতেন বাউফলের পালপাড়া এলাকার পাল সম্প্রদারের মানুষ। পাশাপাশি তারা ভাতের মাড় ফেলার বড় পাত্র এবং ভাত খাওয়ার বাসন তৈরি করতেন। এছাড়া পানি রাখার জন্য বড় বড় পাত্রও (কলস) তৈরি করতেন। সেসময় এসব বিক্রি করে তিনবেলা খাবার জোটাতেই দিনরাত এক করতে হতো তাদের। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মন্দা ভাব থাকলেও গত দুই দশকে পালদের ব্যবসায় সুবাতাস বইছে।বড় বড় বাসন না বানিয়ে তারা ছোট
ছোট জিনিস বিশেষ করে ফুলের টব, ফুলদানি, সিগারেটের স্ট্রে কিংবা শোপিচ তৈরি শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু করেন ব্যবহার উপযোগী প্লেট, কাপ-প্রিচ, ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের বাটিসহ ডিনারসেট। গুণগত মান এবং নান্দনিক হওয়ায় এসব পণ্য উৎপাদন করে সারাদেশে তাক লাগিয়েছেন তারা।ল পাড়ার এই সমৃদ্ধি ও গতিশীলতা নিয়ে কথা হয় প্রবীণ বিশ্বেস্বর পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের পরিচিতি এখন দেশজুড়ে। একটা সময় ছিল আমাদের
অভাব-অনটনের শেষ ছিল না। এখন আমাদের সব পরিবারই সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমার দুই সন্তানকে আমি লেখাপড়া শিখিয়েছি, যাদের একজন চারুকলায় এবং একজন বিবিএ করেছে। তারাই এখন আমার ব্যবসা দেখভাল করছে।তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে কাজ করছি। ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার রয়েছে যারা সরাসরি এমন আধুনিক পণ্য তৈরি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করছে। ফলে এ এলাকার কয়েকশো মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকেই
আছেন যারা কাজ শিখে নিজেরাই নতুন নতুন কারখানা দিচ্ছেন। আমাদের তৈরি পণ্য এখন আড়ং, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটসহ দেশের বড় বড় শপিংমলে বিক্রি হয়। এছাড়া বিশ্বের অন্তত ৫০ দেশে এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে এবং চাহিদাও বেশ রয়েছে।তিনি আরও বলেন, আমরা সরাসরি রপ্তানি করছি না। কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য সরবরাহ করি, তারাই বিদেশে রপ্তানি করছে। সব মিলিয়ে কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে।
‘প্রিমত মৃৎ শিল্প’র স্বত্বাধিকারী লক্ষ্মী রানী পাল বলেন, আমরা বিভিন্ন পণ্য ঢাকার নামি-দামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছি। তবে ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলো যে চড়া দামে পণ্য বিক্রি করছে আমাদের সেই অনুপাতে খুব বেশি দাম দিচ্ছে না।তিনি আরও বলেন, এখন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। মাটি কেনা থেকে শুরু করে কারিগর খরচ, জ্বালানি খরচ অনেক। আমাদের এখন সীমিত লাভ হচ্ছে। তারপরও ভালো আছি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।তিনি বলেন, সরকারিভাবে এখানকার শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৃৎশিল্পের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে বিভিন্ন মেলায় মৃৎশিল্পের জন্য স্টলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, এতে তাদের পরিচিতি এবং বাজার দুটোই বাড়ছে। আগামীতেও মৃৎশিল্পের উন্নয়নে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সেটি অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন:
