আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পটুয়াখালী জেলার প্রতিবেদন। পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় জেলা, যা প্রশাসনিক, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। জেলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা তুলে ধরতে বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জরিপ ও প্রতিবেদন পরিচালিত হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলার প্রতিবেদন
পটুয়াখালী জেলায় পরিচালিত বিভিন্ন জরিপভিত্তিক গবেষণা ও প্রতিবেদন জেলার জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অবকাঠামো, দারিদ্র্য পরিস্থিতি এবং উন্নয়ন সম্ভাবনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। এসব প্রতিবেদন জেলা উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতিনির্ধারণ এবং গবেষণার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
পটুয়াখালী জেলায় পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদন (PDF) ডাউনলোড করুন:
পটুয়াখালী জেলায় পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদন পিডীএফ ফাইল ডাউনলোড করুন ।

পটুয়াখালী জেলাকরণ : ঐতিহাসিক প্রতিবেদন
পটুয়াখালী জেলার প্রশাসনিক ইতিহাস দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল। ১৮০৭ সালে বরিশালের জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মিঃ বেটি। তাঁর শাসনামলেই দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন কেটে বসতি সম্প্রসারণ শুরু হয়। এই প্রশাসনিক প্রয়োজনের ধারাবাহিকতায় ১৮১২ সালে পটুয়াখালী অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে মির্জাগঞ্জ থানা গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে দেওয়ানী শাসন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৮১৭ সালে বরিশালে পৃথক চারটি মুন্সেফী চৌকি স্থাপন করা হয়। এগুলো হলো—
- বাউফল
- কাউখালী
- মেহেন্দিগঞ্জ
- কোটের হাট
বাউফল চৌকির প্রথম মুন্সেফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্রজমোহন দত্ত।
লাউকাঠী ও কালিকাপুরের উত্থান
১৮৬০ সালের ১ জুন বাউফল থেকে মুন্সেফী চৌকি স্থানান্তর করা হয় লাউকাঠীতে। ব্রজমোহন দত্ত লাউকাঠী চৌকিরও মুন্সেফ ছিলেন। সে সময় লাউকাঠীর দক্ষিণ পাড় ছিল গভীর অরণ্যপূর্ণ এলাকা। ঐ অরণ্যের ভেতরে একদল কাপালিক বিগ্রহ স্থাপন করে কালিমন্দির প্রতিষ্ঠা করে এবং ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে লোকমুখে এটি পরিচিতি পায় ডাকাতিয়া কালিবাড়ি নামে।
ব্রজমোহন দত্ত পটুয়াখালীতে একটি নতুন মহকুমা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তাঁর এই উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে—
- ১৮৬৭ সালের ২৭ মার্চ কলকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টির ঘোষণা প্রকাশিত হয়
- ১৮৭১ সালে পটুয়াখালী আনুষ্ঠানিকভাবে মহকুমায় রূপান্তরিত হয়
জমিদার হৃদয় শংকরের পুত্র কালিকা প্রসাদ রায়ের নামানুসারে লাউকাঠীর দক্ষিণ পাড়ের নামকরণ করা হয় কালিকাপুর। এখানেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে পটুয়াখালী শহর। মহকুমা সদর অফিস স্থাপিত হয় কালীবাড়ি পুকুরের পূর্ব পাড়ে।
প্রথমদিকে বাঁশ ও ছনের ঘরে আদালত বসত বলে স্থানীয়দের কাছে এটি পরিচিত ছিল “বাউশশা কোর্ট” নামে। তখন ব্রজমোহন দত্ত একযোগে মুন্সেফ ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।
জেলা হিসেবে পটুয়াখালীর অভ্যুদয়
দীর্ঘ এক শতাব্দী মহকুমা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর আসে নতুন অধ্যায়।
- ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি খুলনা বিভাগের তৎকালীন কমিশনার এ. এম. এফ জেলা প্রশাসকের ভবনের দরবার হলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন
- ১৯৬৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম. আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে পটুয়াখালী জেলা উদ্বোধন করেন
পটুয়াখালীর প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন হাবিবুল ইসলাম।
বিভাগীয় পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক প্রতিবেদন
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও (পাকিস্তান আমল থেকেই) বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা খুলনা বিভাগের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে—
-
১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি—এই ছয়টি জেলা নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশের পঞ্চম বিভাগ ‘বরিশাল বিভাগ’।
এই পুনর্গঠন পটুয়াখালী জেলার প্রশাসনিক গুরুত্ব ও উন্নয়ন সম্ভাবনাকে নতুন মাত্রা দেয়।
পটুয়াখালী জেলার প্রতিবেদনমূলক ইতিহাস আমাদের জানায়—এই জেলা কেবল একটি প্রশাসনিক একক নয়, বরং দীর্ঘ সংগ্রাম, পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক উন্নয়নের ফল। জরিপ প্রতিবেদন, জেলাকরণ ইতিহাস এবং প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস—সবকিছু মিলিয়ে পটুয়াখালী আজ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।