আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পটুয়াখালী জেলার পেশা। পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত একটি উপকূলীয় ও নদীবিধৌত জেলা। ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ, নদী-নালা ও বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এ জেলার মানুষের পেশাগত কাঠামো বৈচিত্র্যপূর্ণ হলেও কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক অর্থনীতি এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

কৃষি : পটুয়াখালীর প্রধান পেশা
পটুয়াখালী জেলার মানুষের মূল ও ঐতিহ্যবাহী পেশা কৃষি। জেলার বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি, পলিমাটি ও নদীর পানিপ্রবাহ কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
প্রধান কৃষি উৎপাদন—
- ধান (আমন, বোরো, আউশ)
- ডাল
- তেলজাতীয় ফসল (সরিষা)
- শাক-সবজি
- মসলা জাতীয় ফসল
উপকূলীয় জেলা হওয়ায় লবণাক্ততার প্রভাব থাকলেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, লবণসহিষ্ণু ধানের জাত এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কৃষি উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে—
- কৃষিশ্রমিক
- বীজ উৎপাদন
- কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবসা

মৎস্য সম্পদ ও মৎস্যজীবী পেশা
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নদী বিধৌত এই জেলায় রয়েছে—
- নদী
- খাল-বিল
- পুকুর
- নিম্নভূমি
- উপকূলীয় মোহনা
এই জলাশয়গুলো মৎস্য উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে—
- পায়রা
- লোহালিয়া
- তেঁতুলিয়া
- আগুনমুখা নদীর মোহনাগুলো ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত।
মৎস্যখাতে যুক্ত পেশাসমূহ—
- জেলে ও নৌকা চালক
- মাছ চাষি
- শুঁটকি উৎপাদন
- মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ
- মাছ ব্যবসা ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কাজ
কুয়াকাটা, কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী অঞ্চলে সামুদ্রিক মাছ আহরণ পটুয়াখালীর অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।
বনভূমি ও বননির্ভর পেশা
পটুয়াখালী জেলার বনাঞ্চলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।
- বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১৫% বনভূমি
- পটুয়াখালী জেলায় বনাঞ্চল মাত্র প্রায় ২%
এই বনভূমিতে উল্লেখযোগ্য গাছ—
- কেওড়া
- গেওয়া
- কাকড়া
- বাবুল
- গোলপাতা
উপকূলীয় বনায়নের মাধ্যমে—
- জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
- সীমিত পরিসরে বননির্ভর জীবিকা (গোলপাতা সংগ্রহ, জ্বালানি কাঠ)
এই খাতেও কিছু মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য
সময় ও চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে পটুয়াখালী জেলার শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।
কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প
-
কুটির শিল্প
-
মৃৎশিল্প (মদনপুরা অঞ্চল বিশেষভাবে পরিচিত)
-
পাট শিল্প
-
বিড়ি শিল্প
ব্যবসা-বাণিজ্য
-
মাছের ব্যবসা
-
গাছ ও কাঠের ব্যবসা
-
চাল ও ডালের ব্যবসা
-
কৃষিপণ্য বিপণন
আধুনিক শিল্প ও প্রতিষ্ঠান
বর্তমানে পটুয়াখালী জেলায় রয়েছে—
- অটো রাইস মিল ও রাইস মিল
- ইটভাটা
- বিস্কুট ফ্যাক্টরি
- সিনেমা হল
- ফিলিং স্টেশন
- ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান
পায়রা বন্দর ও পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন ও উদীয়মান পেশা
বর্তমান সময়ে পটুয়াখালী জেলার মানুষ নতুন নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছে—
- সরকারি ও বেসরকারি চাকরি
- শিক্ষকতা
- স্বাস্থ্যসেবা
- এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থা
- ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা
- পর্যটন খাত (কুয়াকাটা কেন্দ্রিক)
- পরিবহন ও লজিস্টিক সেবা
বিশেষ করে পর্যটন শিল্প কুয়াকাটা এলাকাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকার উৎস হয়ে উঠছে।

পটুয়াখালী জেলার পেশাগত কাঠামো মূলত কৃষি ও মৎস্যনির্ভর হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবাখাতের বিকাশ ঘটছে। নদী, সাগর ও উপকূলীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এই জেলার মানুষ পরিশ্রম, সংগ্রাম ও অভিযোজনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা গড়ে তুলেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলা ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।