আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পটুয়াখালী জেলার আয়তন কত। পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় জেলা। ভৌগোলিক অবস্থান, বিস্তৃত চরাঞ্চল, নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত পরিবেশের কারণে এ জেলার আয়তন ও ভূপ্রকৃতি বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহন করে।

পটুয়াখালী জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন
পটুয়াখালী জেলার ভৌগোলিক সীমারেখা নিম্নরূপ—
- উত্তরে: বরিশাল জেলা
- দক্ষিণে: বঙ্গোপসাগর
- পূর্বে: ভোলা জেলা
- পশ্চিমে: বরগুনা জেলা
পটুয়াখালী জেলার মোট আয়তন প্রায় ৩,২২১.৩১ বর্গ কিলোমিটার। বিস্তৃত এই আয়তনের একটি বড় অংশ নদী, খাল, বিল ও চরাঞ্চল দ্বারা গঠিত। জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান নদীগুলোর মধ্যে পায়রা, লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া ও আগুনমুখা উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসনিক কাঠামো
বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনিকভাবে গঠিত—
- ৮টি উপজেলা
- ৯টি থানা
- ৫টি পৌরসভা
- ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ
- ৪টি জাতীয় সংসদীয় আসন
এই প্রশাসনিক কাঠামোর মাধ্যমে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবা পরিচালিত হয়।
পটুয়াখালী শহরের বয়স ও নামকরণের ইতিহাস
পটুয়াখালী শহরের বয়স প্রায় দেড়শ বছর। তবে “পটুয়াখালী” নামের উৎপত্তি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। কবে, কখন এবং কীভাবে পটুয়াখালী নামকরণ হয়েছিল—এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য দালিলিক তথ্য খুব বেশি পাওয়া যায় না।
তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও গবেষক স্বর্গীয় দেবেন্দ্র নাথ দত্তের পুরোনো কবিতার সূত্র ধরে মনে করেন, “পতুয়ার খাল” থেকেই পটুয়াখালী নামের উৎপত্তি।
পতুয়ার খাল ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের ইতিহাস
সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ জলদস্যুদের হামলা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও অপহরণের কারণে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। সে সময়—
- বর্তমান পটুয়াখালী শহর এলাকা ছিল গভীর বনাঞ্চল
- নদীর উত্তর পাড়ে ছিল লোকালয়
- বর্তমান লাউকাঠী নদী ছিল লোহালিয়া ও পায়রা নদীর সংযোগকারী একটি ভাড়ানী খাল
এই খাল দিয়েই পর্তুগিজ জলদস্যুরা নৌপথে এসে গ্রাম থেকে গ্রামে চালাত নির্যাতন ও লুটতরাজ।
স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে এই ভাড়ানী খাল পরিচিত হয়ে ওঠে “পতুয়ার খাল” নামে। কালক্রমে এই নাম থেকেই পটুয়াখালী নামের উৎপত্তি ঘটে বলে ধারণা করা হয়।
১৯৮০ সালে শেরেবাংলা টাউন হলে অনুষ্ঠিত “পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য” শীর্ষক সেমিনারে অধিকাংশ বক্তা, প্রবন্ধকার এবং বরিশালের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ এই মতকে সমর্থন করেন।
পটুয়াখালী নামকরণের অন্যান্য মত
পটুয়াখালী নামকরণ নিয়ে আরও দুটি মত প্রচলিত আছে—
১. একসময় এ অঞ্চলে পটুয়ার দল বাস করত। তারা নিপুণ হাতে মৃৎপাত্র তৈরি করত এবং পটে বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করত। এই “পটুয়া” শব্দ থেকেই পটুয়াখালী নামের উৎপত্তি হতে পারে।
২. এলাকাটি পেট-আকৃতির খাল দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় একে প্রথমে “পেটুয়াখালী” বলা হতো, যা পরে রূপান্তরিত হয়ে “পটুয়াখালী” হয়েছে।
তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এই দুটি মতের পক্ষে জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

পটুয়াখালী জেলা আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় জেলা। প্রায় ৩,২২১.৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলা নদী-নালা, চরাঞ্চল, সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। একই সঙ্গে এর নামকরণ ও ইতিহাস পটুয়াখালীকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য অংশ করে তুলেছে।