আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য। পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় জেলা। ভৌগোলিক অবস্থান, নদী–নালা, সাগরসংলগ্নতা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে এ জেলার জনবসতি, জীবনযাত্রা ও জনসংখ্যার গঠন বৈচিত্র্যময়।

পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য
জনসংখ্যার সামগ্রিক চিত্র
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পটুয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যা ১৫,৩৫,৮৫৪ জন। এর মধ্যে—
- পুরুষ: ৭,৫৩,৪৪১ জন
- মহিলা: ৭,৮২,৪১৩ জন
এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জেলাটিতে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় সামান্য বেশি, যা সামাজিক ও জনমিতিক দিক থেকে একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
জেলাটিতে মোট পরিবারের সংখ্যা ৩,৪৬,৪৬২টি। গড় পারিবারিক আকার তুলনামূলকভাবে মাঝারি, যা গ্রামীণ ও আধা-শহুরে জীবনব্যবস্থার প্রতিফলন।

আয়তন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব
পটুয়াখালী জেলার আয়তন প্রায় ৩,২২১.৩১ বর্গ কিলোমিটার। এই আয়তনের বিপরীতে জনসংখ্যা বিবেচনা করলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে প্রায় ৪৭৫–৪৮০ জন বসবাস করে (আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী)। উপকূলীয় চরাঞ্চল ও নদীঘেরা এলাকাগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলক কম হলেও সদর ও পৌর এলাকাগুলোতে জনসংখ্যার চাপ বেশি।
প্রশাসনিক কাঠামো ও জনবসতি
পটুয়াখালী জেলা গঠিত—
- ৮টি উপজেলা
- ৯টি থানা
- ৫টি পৌরসভা
- ৭৬টি ইউনিয়ন
- ৪টি জাতীয় সংসদীয় আসন
এই প্রশাসনিক বিভাজনের মাধ্যমে জেলার শহরাঞ্চল, গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলে জনসংখ্যা বণ্টিত হয়েছে। পটুয়াখালী সদর, কলাপাড়া ও গলাচিপা উপজেলায় জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
জনসংখ্যার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য
পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যার অধিকাংশই গ্রামভিত্তিক। কৃষি, মৎস্য, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও দিনমজুরি এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। উপকূলীয় জেলা হওয়ায় এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা নদী, সাগর ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
ধর্মীয় দিক থেকে এ জেলার জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই মুসলিম। পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। কুয়াকাটা ও আশপাশের এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস পটুয়াখালীর জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
শিক্ষার হার ও মানবসম্পদ
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে পটুয়াখালী জেলায় শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) জেলার মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান ও উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এবং বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে, যা জনসংখ্যার গতিশীলতা নির্দেশ করে।
পটুয়াখালী নামকরণ ও জনবসতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পটুয়াখালী শহরের বয়স প্রায় দেড়শ বছর। এই নামের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ গবেষক স্বর্গীয় দেবেন্দ্র নাথ দত্তের কবিতার সূত্র ধরে “পতুয়ার খাল” থেকেই পটুয়াখালী নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন।
সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগীজ জলদস্যুদের লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণাংশ প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নদী ও খালের আশপাশে নতুন করে জনবসতি গড়ে ওঠে, যা আজকের পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যা বিস্তারের ভিত্তি তৈরি করে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যা শুধু সংখ্যার দিক থেকেই নয়, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, কৃষি ও মৎস্যনির্ভর জীবনব্যবস্থা—সব মিলিয়ে পটুয়াখালীর জনসংখ্যা বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।