আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য,পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ।
পটুয়াখালী জেলা সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ-
পটুয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ও বাংলাদেশের একটি উপকূলীয় জেলা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পটুয়াখালী বরিশাল বিভাগের একটি সম্ভাবনাময় জেলা। পর্যটন নগরী কুয়াকাটা এ জেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। এখানে রয়েছে একসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অপরূপ দৃশ্য যা বিশ্বে বিরল। তাই পর্যটকদের কাছে পটুয়াখালী “সাগরকন্যা” নামে পরিচিত। উপজেলা সংখ্যানুসারে পটুয়াখালী বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। মেঘনা নদীর অববাহিকায় পললভূমি এবং কিছু চরাঞ্চল নিয়ে এই জেলা গঠিত।
পটুয়াখালী জেলা শহর একটি পূর্নাঙ্গ প্রশাসনিক অঞ্চল। এই জেলায় বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ আছে প্রচুর সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠা। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পটুয়াখালী মহুকুমাকে একটি জেলায় উন্নীত করা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দর, দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, দক্ষিণাঞ্চলের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ শেখ হাসিনা সেনানিবাসসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত।

পটুয়াখালী জেলার জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য:-
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পটুয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যা ১৫,৩৫,৮৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭,৫৩,৪৪১ জন এবং মহিলা ৭,৮২,৪১৩ জন। মোট পরিবার ৩,৪৬,৪৬২টি। পটুয়াখালী-জেলার উত্তরে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ভোলা জেলা, পশ্চিমে বরগুনা জেলা। জেলার আয়তন প্রায় ৩,২২১.৩১ বর্গ কিলোমিটার। পটুয়াখালী-জেলা ৮টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৭৬টি ইউনিয়ন ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

পটুয়াখালী শহরের বয়স প্রায় দেড়’শ বছর। এই নামের উৎপত্তি নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কবে, কখন, কীভাবে পটুয়াখালী নামকরণ হয়েছিল তা বলা দুরূহ ব্যাপার। এ নামকরণ সম্পর্কে তেমন কোনো দালিলিক তথ্য নেই। পটুয়াখালী নামকরণের ক্ষেত্রে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশই স্বর্গীয় দেবেন্দ্র নাথ দত্তের পুরানো কবিতার সূত্র ধরে “পতুয়ার খাল” থেকে পটুয়াখালী নামকরণের উত্পত্তি বলে সমর্থন করেন।
সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগীজ জলদস্যুদের হামলা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন, অপহরণ ও ধ্বংসলীলায় বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। এসময় বর্তমান পটুয়াখালী শহর এলাকা ছিল সুন্দরবন এবং নদীর উত্তর পাড়ে ছিল লোকালয়। উত্তর পাশের বর্তমান লাউকাঠী নদী ছিল লোহালিয়া ও পায়রা নদীর ভাড়ানী খাল। এই ভাড়ানী খাল দিয়েই পর্তুগীজ জলদস্যুরা এসে গ্রামের পর গ্রামে চালাত লুণ্ঠন ও অত্যাচার। এ খাল দিয়ে পর্তুগীজদের আগমনের কারণে স্থানীয়রা তৈরি করে অনেক কেচ্ছা ও কল্প কাহিনী।

এর নাম তখন সবার মুখে মুখে পতুয়ার খাল। পরবর্তীতে এই পতুয়ার খাল থেকেই পটুয়াখালীর উৎপত্তি হয়। ১৯৮০ সনে শেরেবাংলা টাউন হলে অনুষ্ঠিত ‘পটুয়াখালী-জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক সেমিনারে অধিকাংশ বক্তা, প্রবন্ধকার ও ‘বরিশালের ইতিহাস’-এর লেখক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ এই মতকে সমর্থন করেন।
পটুয়াখালী নামকরণের অপর দু’টি মত হচ্ছে এ অঞ্চলে একসময় পটুয়ার দল বাস করত। এরা নিপুণ হাতে মৃৎপাত্র তৈরি করে তাতে নানা ধরনের পট বা ছবির সন্নিবেশ ঘটাত। এই ‘পটুয়া’ থেকে ‘পটুয়াখালী’ নামের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে। অথবা পেট-আকৃতির খাল বেষ্টিত এলাকাই হয়তো পেটুয়াখালী এবং পরে তা অভিহিত হয় পটুয়াখালী নামে। তবে শেষোক্ত অভিমত দু’টির কোনো জোরালো সমর্থন মেলেনি।
আরও পড়ূনঃ
