‘সরকার মা ইলিশ সংরক্ষণে যে ২২ দিনের অবরোধ দেয়, সেখানে মা ইলিশের ডিম দিতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৬ দিন। এরপর সরকার হঠাৎ আবার ৬৫ দিনের অবরোধ লাগিয়ে দিলো। কী কারণে সরকারের এই সিদ্ধান্ত মাথায় ধরছে না। ৬৫ দিনের অবরোধ শুরুর পর থেকে আমার ট্রলারে লোকসান শুরু হইলো। বর্তমানে আমার বয়স ৬৩ বছর, আমি ১৭ বছর বয়স থেকে সাগরে মাছ ধরি।
এরপর ট্রলারের মাঝি হয়েছি। একটি একটি করে ২টি ট্রলারের মালিক হয়েছি। এখন শুধু এই ৬৫ দিনের অবরোধ আর আবহাওয়া খারাপের কারণে সারাজীবনের আয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের লোকসানের ঘানি টানতে টানতে ৭০-৮০ লাখ টাকার ঋণী হয়েছি। শেষ পুঁজি-পাট্টা যা আছে তা সব বিক্রি করলেও ঋণ থেকে মুক্তি পাবো না।’
ঋণের জালে বন্দি জীবন, ৬৫ দিনের অবরোধ থেকে মুক্তি চান জেলেরা
বৈরি আবহাওয়ায় আশ্রয় নিতে এসে পটুয়াখালী বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলিপুর ঘাটে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার জেলে কামরুল ইসলাম ওরফে কালু মাঝি। ‘সুমি আক্তার’ নামের ট্রলারের মালিক ও মাঝি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দশ দিন আগে বাঁশখালী থেকে ২২ জন জেলে নিয়ে সাগরে যাই, ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজার ও মাছ ধরার সরঞ্জামাদী নিয়ে সাগরে নেমে ১০ দিন মাছ ধরার সুযোগ পাই।

এরপর আবহাওয়া খারাপ হয়ে সমুদ্র উত্তাল হতে থাকে। সমুদ্রে আর থাকা সম্ভব হয়নি। তাই আশ্রয় নিতে কাছাকাছি এই আলিপুরে ঘাটে আসলাম। যা মাছ পেয়েছি তার দাম হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। দুই লাখ টাকা লোকসান, এরপর স্টাফের বেতন। এভাবে করতে করতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি ট্রলার বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবো, না হয় একসময় আমার সব শেষ হয়ে যাবে।’
শুধু কামরুল মাঝি নয়, আলীপুর-মহিপুর ঘাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দুই একটি ট্রলার চাহিদা মতো মাছ পেলেও বেশিরভাগ ট্রলার খালিহাতে ফিরছে। এতে বাড়ছে জেলের ঋণের বোঝা, অভাবের কারণে পেশার ওপর তৈরি হচ্ছে জেলেদের অনিহা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ৭০-৮০ শতাংশ জেলে, মৎস্য পেশায় সংকট বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যা এখন জেলেদের জীবনে।

ঘাটগুলোতে থাকা জেলে, মাঝি, আড়ৎদার, পাইকার, ট্রলার মালিকসহ মৎস্য পেশার বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবারই অভিযোগ ৬৫ দিনের অবরোধ এবং অবরোধকালীন সময়ে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকারকে ঘিরে। তাদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই বারবার আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে। এর ওপর একটানা ৬৫ দিনের অবরোধ জেলেদেরকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। যা বাংলাদেশে এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ৬৫ দিনের অবরোধকে বিলুপ্ত করার বিকল্প নেই।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ছিল সমুদ্রে ৬৫ দিনের অবরোধ। এরপরে ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। এতে একদিকে সমুদ্রে না থাকতে পেরে বঞ্চিত হচ্ছে ইলিশ থেকে, অন্যদিকে ক্ষতি হচ্ছে মাছ ধরার জাল, ট্রলার সরঞ্জামাদির। সেইসঙ্গে জীবনের ঝুঁকিতো থেকেই যায়।
আরও পড়ুন: